অবশেষে মুখ খুললেন ডি কক

166
Smiley face

কেন হাঁটু গেড়ে বসতে রাজি হননি, কেন তাঁর মনে হয়েছে, এমন নির্দেশ দেওয়ায় অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে, সেটা বিবৃতিতে ব্যাখ্যা করেছেন ডি কক। পুরো বিবৃতি এখানে তুলে ধরা হলো—

‘শুরুতেই আমার সতীর্থ ও দেশের সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি কখনোই এটাকে কুইন্টন ইস্যু বানাতে চাইনি। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্ব আমি ভালোভাবেই বুঝি এবং খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের যে উদাহরণ সৃষ্টি করার দায়িত্ব আছে, সেটাও জানি। যদি আমি হাঁটু গেড়ে বসলে অন্যরা শিক্ষিত হতো এবং অন্যদের জীবন সহজ হয়ে যেত, আমি খুশিমনেই তা করতাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে না খেলে আমি কাউকে অসম্মান করতে চায়নি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে তো কোনোভাবেই নয়। অধিকাংশ মানুষ হয়তো বুঝতে পারেনি, ম্যাচ খেলার পথে, মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ আমাদের এটা জানানো হলো।’

‘আমার কারণে যে দুঃখ, বিভ্রান্তি ও ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, এ জন্য আমি দুঃখিত। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এত দিন চুপ ছিলাম আমি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, একটু ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার। যারা জানে না, আমি নিজেই মিশ্র বর্ণের পরিবার থেকে এসেছি। আমার সৎবোনেরা কৃষ্ণাঙ্গ, আমার সৎমা কৃষ্ণাঙ্গ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন আন্দোলন হচ্ছে বলেই নয়, জন্মের পর থেকেই আমার জীবনে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস। কোনো একক ব্যক্তির চেয়ে সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা ও সবার মধ্যে সমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবারই অধিকার আছে এবং সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ—এটা শিখে আমি বড় হয়েছি।’

‘আমার মনে হয়েছে যখন আমাকে ওভাবে একটা জিনিস করতে বলা হলো, আমার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। গত রাতে বোর্ডের সঙ্গে সবশেষ যে আবেগী আলাপ হলো, এখন তাদের উদ্দেশ্যটাও আমি আরেকটু ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। এটা আরও আগে করলেই ভালো হতো, তাহলেই ম্যাচের দিনের ঘটনাটা এড়ানো যেত।’

‘আমি জানি, আমাকে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের আগে বলা হয়েছিল, আমরা যা করতে চাই, সেটা করার স্বাধীনতা আমাদের আছে। আমি আমার ভাবনা নিজের কাছেই রেখেছি এবং আমার পরিবার ও দেশের হয়ে খেলার গৌরবের কথা ভেবেছি। আমি বুঝতে পারছিলাম না, যেখানে প্রতিটি দিন যখন সব ধরনের মানুষের সঙ্গে থাকি, তাঁদের ভালোবাসি, তাহলে কেন একটা আচরণ দিয়ে সেটা আমাকে প্রমাণ করতে হবে।’

‘আপনাকে যখন কোনো আলোচনা ছাড়া কিছু করতে বলা হয়, তখন আমার মনে হয়েছে পুরো ব্যাপারটা অর্থহীন। আমি যদি বর্ণবাদী হতাম, আমি খুব সহজে হাঁটু গেড়ে বসতে পারতাম এবং মিথ্যা বলতে পারতাম, কিন্তু সেটা ভুল হতো এবং ভালো একটা সমাজ এতে সৃষ্টি হতো না। আমার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে যারা, আমার সঙ্গে যারা খেলেছে, তারা জানে, আমি কেমন মানুষ। একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে অনেক নামেই ডাকা হয়েছে।’

‘প্রতিবন্ধী, বেকুব, স্বার্থপর, অবিবেচক। কিন্তু এসবে আমি কখনো কষ্ট পাইনি। ভুল বোঝাবুঝির কারণে বর্ণবাদী ডাকা হওয়াতে পেয়েছি। এটা আমার পরিবারকে আহত করেছে। এটা আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে দুঃখ দিয়েছে। আমি বর্ণবাদী নই। আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে আমি জানি সেটা এবং আমাকে যারা চেনে তারাও জানে বলে আমার ধারণা। আমি জানি, আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। কিন্তু এই পুরো ব্যাপারটা আমাকে ঘিরে আবর্তিত হওয়ায় কতটা দুঃখিত, সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। এখানে আমি মূল বিষয় না।’

‘আমি মিথ্যা বলব না, এত গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ খেলতে যাওয়ার পথে মানতেই হবে, এমন একটা নির্দেশনা দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছি। আমরা ক্যাম্প করেছি, আমাদের সেশন ছিল। আমরা জুম মিটিং করেছি। আমরা জানি, আমাদের অবস্থান কী এবং সেটা হলো, এ ব্যাপারে সবাই সংঘবদ্ধ। আমি আমার সব সতীর্থকে ভালোবাসি। এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ক্রিকেট খেলার চেয়ে বেশি আর কিছুই ভালোবাসি না।’


Smiley face