
রান তাড়ায় প্রথম বলেই মেহেদী হাসানকে চার মেরে রিজওয়ান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সময় খুব একটা বেশি না–ও নিতে পারে পাকিস্তান। তবে তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্য সেটা হতে দেননি। মোস্তাফিজের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খেলতে গিয়ে পরপর দুই দিন স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন বাবর। তবে ফখর বা রিজওয়ান কোনো ঝুঁকি নেননি আর। পাওয়ারপ্লেতে উঠেছে ২৭ রান, কিন্তু উইকেট আর হারায়নি পাকিস্তান। ফখরের সঙ্গে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৭৮ বলে ৮৫ রানের জুটি ম্যাচ শেষ করে দিয়েছে।
ফখরের পর রিজওয়ানও জীবন পেয়েছেন, তবে এর অনেক আগেই আসলে শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের লড়াইয়ের সম্ভাবনা। রিজওয়ান শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন সাইফের হাতে আমিনুলের বলে ক্যাচ দিয়ে, ৪৫ বলে ৩৯ রান করে। মাহমুদউল্লাহ এদিন শুধু আমিনুলকে নয়, বোলিংয়ে এনেছেন নাজমুল, আফিফের পর সাইফকেও। তবে সাইফ বা নাজমুলের মূল যে কাজ, সেই ব্যাটিংয়েই আরেকবার গড়বড় করে ফেলেছে আজ বাংলাদেশ।
পাকিস্তান বোলারদের সামনে রীতিমতো হাঁসফাঁস করতে করতে ২০ ওভার খেলেও ১০৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০ ওভার খেলে অলআউট না হয়ে নিজেদের ইতিহাসেই টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে কম রানের সংগ্রহ বাংলাদেশের আছে আর দুটি—২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষেই ৯ উইকেটে ৮৫ রানের পর গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯ উইকেটে ১০৪ রান। আগের দুটি ঘটনাও মিরপুরেই।
দুই ওপেনার ব্যর্থ হয়েছেন আজও। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই শাহিন শাহ আফ্রিদির ফুললেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা ডেলিভারিতে আড়াআড়ি ব্যাট চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন সাইফ। আম্পায়ার আউট না দিলেও সে উইকেট রিভিউ নিয়ে পেয়েছে পাকিস্তান। পরের ওভারে মোহাম্মদ ওয়াসিমের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে শরীর থেকে দূরে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম, ৮ বলে ২ রানে। ৫ রানেই ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
আফিফ অবশ্য আফ্রিদির ওপর চড়াও হয়েছিলেন এরপর। তবে ফ্লিক করে ছয় মারার পরই ছন্দপতন হয়েছিল তাঁর, আফ্রিদির আচমকা থ্রো পায়ে গিয়ে লাগার পর। ফিজিওর দ্বারস্থও হতে হয় তাঁকে। এরপর লেগবাই থেকে আরেকটা চারসহ সে ওভারে আসে ১২ রান, ইনিংসে শেষ পর্যন্ত সেটিই সর্বোচ্চ রানের ওভার হয়ে থেকেছে। দুই বাঁহাতির সামনে অফ স্পিনার শোয়েব মালিককে আনেন বাবর, তবে সুবিধা করতে পারেননি খুব একটা। ২ ওভারে মালিক গুনেছেন ১৬ রান।
পাওয়ারপ্লেতে অন্তত আগের দিনের তুলনায় ভালো সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশ, উঠেছে ৩৬ রান। শুরুর চাপ সামাল দিয়ে থিতু হয়েছিলেন আফিফ ও শান্ত দুজনই। শেষ পর্যন্ত আফিফের আলগা ডিসমিসালে ভেঙেছে ৩৬ বলে ৪৫ রানের সে জুটি। দ্বিতীয় ওভার করতে আসা শাদাব খানকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে যেন নিজেই ভড়কে গেছেন আফিফ, বল ব্যাটে লেগে উঠেছে সেখানেই! ২১ বলে ২০ রান করেই থামতে হয়েছে তাঁকে।
বাংলাদেশও ছিটকে গেছে মোটামুটি সেখান থেকেই। মাহমুদউল্লাহ নেমে রিভিউ নিয়ে বাঁচলেও সুবিধা করতে পারেননি মোটেও। স্ট্রাইক বদলানোর কাজও ঠিকঠাক করতে না পেরে বাড়িয়েছেন চাপ। হারিস রউফের বলে থার্ডম্যানের কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরার আগে করেছেন ১৫ বলে ১২ রান। নাজমুলের সঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়কের জুটিতে উঠেছে ২৮ রান, তবে খরচ হয়েছে ২৭ বল।
ইনিংসে বাংলাদেশের একমাত্র স্বস্তির জায়গা বলতে গেলে নাজমুল হোসেনের ব্যাটিং–ই। প্রথমে রান তুলতে প্রায় সমানসংখ্যক বল খেললেও পরে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন একটু। গ্যাপ বের করে মেরেছেন বাউন্ডারি, দুই স্পিনার শাদাব ও নওয়াজের হাফ ট্র্যাকারে। ফিফটিটাও নাগালেই ছিল তাঁর। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে শাদাবের দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে অবশ্য ৩৪ বলে ৪০ রান করেই থামতে হয়েছে তাঁকে, ইনিংসে মেরেছেন ৫টি চার। ডেথ ওভারে আজ ছিলেন একাদশে ফেরা আফ্রিদি, ১৭ ও ১৯তম ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র ৫ রান। শেষ দিকে নুরুল বা মেহেদীও আজ ছিলেন চুপচাপ। আগের ম্যাচে শেষ ৫ ওভারে ৪৭ রান তোলা বাংলাদেশ আজ তুলেছে মাত্র ২৩ রান।
