
লেখা :সবনাজ মোস্তারী স্মৃতি
হেমন্ত মাস ।জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে ঘরে। মমবাতির আলো আর শীতল বাতাস যেনো আরো বেশি জানান দিচ্ছে অনির কথা। আজ ভীষণ ভাবে অনিকে মনে পড়ছে মনজুরির । তাকে দেখতে ইচ্ছা করছে । আজ মনজুরির নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে। অবশ্য অনি ছাড়া সে ভীষণ একা।
অনিহীন এই শহরটা মনজুরির কাছে বিভৎষ এক ধ্বংসস্তুপের মত । এক সময় মনজুরি আর অনি এই শহরের অলিগলি চষে বেরিয়েছে অথচ আজ সব কিছুই স্মৃতি। মাঝে মাঝে মনজুরির মনে হয় যেনো মস্তিষ্কের সমস্ত নিউরোনগুলো ছিড়ে ফেলে অনির প্রত্যেকটা স্মৃতি ভুলে যায়।
অনির স্মৃতিগুলো নিদারুণ ভাবে তাকে প্রতিটা মুহূর্ত কষ্ট দেয় । এক মুহূর্ত স্বস্তি দেয় না। মনজুরির সমস্ত সুখ শান্তি অনি কেরে নিয়েছো। কেনো এমনটা করেছিলো অনি, মনজুরি জানে না। মাঝে মাঝে মনজুরির ভীষণ রাগ হয় মনে মনে ভাবে অনিকে সে নিজ হাতে খুন করে সমস্ত কিছুর প্রতিশোধ নিবে। তবে ভালোবাসার মানুষকে নিজের হাতে কি খুন করা যায় ?
হয়তো যায় আবার হয়তো যায় না। আকাশে সুন্দর চাদঁ উঠেছে। এমন চাদেঁর আলোয় কতদিন মনজুরি আর অনি একসাথে হাতে হাত রেখে চাদঁ দেখেছে। দুজনে ভেসেছে স্বপ্নের দেশে। আর সেই স্বপ্ন অনি এক নিমিষে ভেঙ্গেও দিয়েছে। পৃথিবীর এক অদ্ভুত নিয়ম মনে হয় এটা । যে স্বপ্ন দেখায় ,সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়ে হারিয়ে যায় খুব সহজেই। যাকে ভালোবেসে ,বিশ্বাস করে নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলো সেই গুনধর মানুষটা মনজুরির নামের সাথে শীল লাগিয়ে দিয়েছে একজন ধর্ষিতা।
শুধু অনি নয় তার দুটো বন্ধু সহ সেদিন কি অমানবিক পশুর মত আচরণ করেছিলো মনজুরির সাথে যা ভাবতেই তার শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। সেদিন কিছুই বলতে পারেনি সে।পাগলের মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো সিলিং এর দিকে। ভাবতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো অনি তার সাথে এমনটা করেছে।
হঠাৎ বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠে । এত রাতে তো কারো আসার কথা নয়। তবে কে আসবে এত রাতে। মনজুরি উঠে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে কে?
অপর পাশের কন্ঠে ভেসে আসে মনজুরি দরজা খোলো। কন্ঠস্বরটা পরিচিত। এই কন্ঠে বহুবার তার নাম শুনেছে। মনজুরি অবাক হয়ে যায় এত দিন পর আবার অনি । কিছুক্ষণ চুপ থেকে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলে অনিকে ভিতরে আসতে বলে।যেনো কিছুই হয়নি। অনি মনজুরিকে জড়িয়ে ধরে। মনজুরির গা ঘিনঘিন করছে এমন জঘন্য মানুষ তাকে স্পর্শ করে যেনো আবারো তার শরীরটা অপবিত্র করে দিলো।
অনি কাদঁছে । মনজুরিকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত বলছে,‘ভুল হয়ে গেছে আমার ’। মনজুরির খুব মায়া হচ্ছে অনিকে দেখে । সে বলল বাদ দাও সব। তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসি। অনি চোখ মুছে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে। মনজুরি চা বানিয়ে নিয়ে আসে হাসি মুখে। যেনো কিছুই হয়নি। তাদের দেখা স্বপ্নগুলোর মত একটা খুব সুন্দর রাত হতে যাচ্ছে আজ । হাসি মুখে অনির দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে মুখোমুখি বসে মনজুরি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অনির দিকে । কত দিন পর আজ দেখছে তাকে।
অনি চায়ের কাপে চুমুক দেয় খুব তৃপ্তিতে। চা শেষ হতে না হতেই চেয়ার থেকে পড়ে যায় মেঝেতে। মনজুরির ঠোঁটের কোনে এক বিভৎষ হাসি। এই হাসির রহস্য ভেদ করে ঢোকার সময় আর অনির নেই।
সমাপ্ত
