ধ্রুবতারা ( ছোটগল্প )

140
Smiley face

সবনাজ মোস্তারী স্মৃতি

আজ অফিস থেকে ফেরার পথে নিজেকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছিলো। মাথায় কিছু কাজ করছিলো না। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি পড়ে যাবো। কোনো মতে রাস্তার মোড়ে এসে রিকশা নিলাম । তবে রাস্তায় এত জ্যাম বাড়ি পৌছানো যেনো তখন দুষ্কর ব্যাপার। তাই রিকশা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম আবারো। তবে আমার ব্রেইন তখন কাজ করছে না। আমি কোথায় যাবো মনে করতে পারছিলাম না। কোন রাস্তায় যাবো সেটাও মনে করতে পারছিলাম না।

রাস্তায় এত গাড়ি এত শব্দ অথচ আমি কোনো শব্দ শুনতে পারছিলাম না।যেনো কোনো এক কাচেঁর ঘরে আমাকে বন্দী রাখা হয়েছে। যে ঘর থেকে আমি সব দেখতে পাবো তবে কোনো শব্দ পাবো না। নিজেকে তখন খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো। এতটা ক্লান্ত ,এতটা অসহায়,এতটা নিঃসঙ্গ এর আগে কখনো লাগেনি। হঠাৎ কেনো এমন হলো বুঝতে পারলাম না। এক পা দু পা করে ফুটপাত ধরে হাঁটছি। আজ নিজের শূন্য হাতের আঙুলের মাঝে একটা হাত অনুভব করছিলাম । মনে হচ্ছিলো এখন যদি একটা হাত আমার এই হাতটা শক্ত করে ধরতো। যদি একটা কাধ থাকতো আমার পাশে ,যে কাধে একটু চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে মাথা রাখতে পারতাম।

আমি কোথায় যাবো কোন রাস্তায় যাবো আমি বুঝতে পারছি না।অথচ এই শহরেই আমার জন্ম এই শহরেই আমার বেরে উঠা। আমার সমস্ত কিছু জুড়ে এই শহর। আমার খুব চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে। হঠাৎ আমার পাশে এসে একজন দাঁড়ালো। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল আমি থাকতে তুমি কাঁদবে কেনো?

আমি মাটির দিক থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকালাম।

আসতে করে বললাম ‘ধ্রুবতারা‘

ধ্রুবতারা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি করে হাসলো।আমাকে জিজ্ঞেস করলো এখনো কি তোমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে? নাকি আমার হাত ধরে তুমি তোমার বাড়ি যাবে?তোমার বাড়ি।তোমার একার নিজের বাড়ি!

আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না ।শুধু মাত্র ঠোটের ফাঁক দিয়ে বের হলো-নিজের বাড়ি। ধ্রুবতারা হাসতে হাসতে শক্ত করে আমার হাত ধরলো।আমরা হাঁটছি কিন্তু  কোনো কথা বলছি না। চারিদিকে কেমন যেনো একটা নিঃস্তব্ধতা নেমে এলো।বাতাসের শুনশান শব্দ ।রাস্তার এত এত ট্রাফিক জ্যাম সব যেনো নিমিষেই হারিয়ে গেলো। চার রাস্তার মাথায় আসতেই একটা বিকট শব্দ হলো । আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। রাস্তার এক পাশে ধ্রুবতারাকে দেখতে পেলাম,সে দাড়িঁয়ে হাসছে। অথচ আমার নিথর দেহটা পরে রইলো রাস্তার মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায়।

সমাপ্ত

 


Smiley face