
সাজিদুর রহমান রুদ্র
কি এক বাজে সময় বলতো? একরম জেল হয়ে গেছে আমার। তাও আবার তিনদিনের।যাকে বলতে পারো সেচ্ছায় কারাবাস। কিন্তু কারাবাসের কয়েদিদের তো হাঁটাচলা,কথা বলার অনুমতি থাকে। কিন্তু আমার নেই। খুব বলতে ইচ্ছা করছে।মনে হচ্ছে যদি ৫টা মিনিট আবার তোমার সাথে কথা বলার অনুমতি পেতাম তাহলে এই পাঁচমিনিটে পুরে একটা উপন্যাস শুনিয়ে দিতাম। সবাই বলে আমি নাকি অনেক সুন্দর করে বিশ্লেষণ করতে পারি।
সত্যি? কিন্তু তোমার সামনে হয়তো পারিনি। খুব বলতে ইচ্ছা করছে,মনে হচ্ছে এক্ষুনি একটা টেলিফোন করি তোমায়,কিন্তু আমার কারাগারের জেলার সাহেব খুব কড়া।সে যদি জানতে পারে আমি এমন কিছু ভাবছি সে খুব রাগ করবে। তাই যখন দেখছি বলার মতো সুযোগ বা অধিকার কিছু নাই তাই লিখে যাচ্ছি। জানো এইকয়দিন আমার কাজ বলতে শুধু বই পড়া।বাজার থেকে বেশকিছু বই কিনে নিয়ে এসেছি, জানিনা উপন্যাসের প্রত্যেকটা চরিত্রে আমি আমার আর তোমার মিল খুঁজে পাচ্ছি বা খোঁজার চেষ্টা করছি।
কিন্তু কেন? খুঁজেই বা লাভ কি? জানো আমার খাবার সীমাবদ্ধ, চাইলেই একয়দিন পছন্দমতো খেতে পারবো না।না ই বা পারবো নিজের সময়মতো । তবুও আমার কেমন যেন আনন্দ লাগছে।মনে হচ্ছে সব ঝামেলা,কোলাহল,চিন্তা থেকে হয়তো মুক্ত থাকবো। আজকে কেন জানি তোমায় অপমান করতে ইচ্ছা করছে না, ইচ্ছা করছে না কোনো গালি দিতে,না ই ইচ্ছা করছে অনেকগুলো জমানো অভিযোগ দিতে।
আজকে ইচ্ছা করছে আরেকবার কথা বলার,তাতে তুমি আমি যতই বিরক্ত হই না কেন তাতে কিছু আসে যায় না আমার। কিন্তু কি আর করার ঐ যে জেলার সাহেব। জানো সে জেলার সাহেবকে আমি দেখিনি কখনও,নিজের মনে মনে তার চেহারা কল্পনা করে নিয়েছি।কি ভয়ানক চেহারা,দৈত্যের মতো চুল তার,ফুটবলের মতো মাথা, হাই টেনশন তাঁরে বিদ্যুৎ যেভাবে আলোর খেলা দেখায় তেমন তার চোখ।কি ভয়ংকর। তাকে নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নাই।হাজার হলেও তার মাধ্যমে আমি নিয়ম কানুন শিখতে পারছি। জীবনে অনেককিছু শিখতে হবে। আমি যে বইটা পড়ছি এতে একটা চরিত্র আছে যার নাম শফিউদ্দিন। তার মধ্যে আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি।এটা খুব বিরক্তিকর। কেন সে আমার মতো হবে? কি দরকার? তার কিসের এতো সখ?সে এমনি ভালো আছে। আমার হোস্টেলের রুমের টেবিল লাইটটা ভেঙে গেছে জানো? সেদিন তোমার সাথে কথা বলতে বলতে ঠিক করার সময় মনে হয় একটা শ্ক্রু লাগানো হয়নি তাই একবার পড়ে-ই ভেঙে গেছে।
জেলারের নির্দেশ হয় চুপচাপ শুয়ে থাকা নাতো বই পড়া,তাই এটা আপাতত ঠিক করা হবে না। কি অদ্ভুত বলতে লাগলে বলা শেষ হয় না,আর লিখতে লাগলে লিখা শেষ হয় না। আগে যেভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনতে এখন কি সেইভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়বে? বড় লিখা তাই হইতো বিরক্ত হয়ে যাবে। থাক আর না লিখি। শফিউদ্দিনে গল্প তো শেষ করতে হবে।নাতো জেলার অনেক রাগ করবে।
