
গোটা বিশ্ব এখন উভয় সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে । একদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের থাবায় নাস্তানাবুদ, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে মানব জীবনে। জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারন যুগের পর যুগ মানবিক সৃষ্ট ধ্বংসাত্নক ক্রিয়াকলাপ। তাহলে পৃথিবী বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে কি জলবায়ু?
নানাবিধ উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়ে আসছিলো বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, কলকারখানার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন । অন্যদিকে বায়ুমন্ডলে অনবরত যোগ হয়ে আসছে দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড কিন্তু সে দিকে মানবজাতির কোনো খেয়াল নেই।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পূর্বেও হয়েছে এবং এখন শুধু ভয়াবহতা রুপ নেওয়া বাকি । ফলশ্রুতিতে আবহাওয়া ক্রমেই চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে ও অতি নিম্মচাপের প্রভাবে সৃষ্টি হচ্ছে সুপার সাইক্লোনের মতো ঘূর্নিঝড় । এটিই কি পৃথিবী বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে জলবায়ু?
আম্ফান ঘূর্নিঝড়ের নামটি দেওয়া থাইল্যান্ডের, ২০০৪ সালে। ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (WMO) এবং ESCAP এর তত্ত্ববধানে নতুন উদ্ভূত ঘূর্নিঝড়ের নামকরনের প্রস্তাব প্রেরিত হয় ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্থান এবং থাইল্যান্ড দেশগুলো থেকে । পরবর্তীতে আরও সাতটি দেশ নামকরন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়।
পূর্বঘটিত ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও শক্তিশালী ছিল ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড় । যা ভারতের ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে দিয়েছিলো ।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছিল ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়। যা এখনো, বাংলাদেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ধ্বংসাত্নক মাপকাঠির রেকর্ডে রয়ে গেছে ৯১’এর ঘূর্ণিঝড় । গড়ে প্রতি বছর পৃথিবীতে ৮০টি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে শক্তিশালী সাইক্লোনগুলো। যা পৃথিবী বদলানোর ইঙ্গিত৷
২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় রোযানু এবং ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ডিয়ামু বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামোতে ব্যাপক আঘাত হেনেছে । অন্যদিকে ২০১৭ সালের ১৭ টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ৬ টি হারিকেনও ছিল ভয়ানক এবং ধ্বংসাত্নক । অতি তীব্র ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চরমভাবে আঘাত হেনেছে সাম্প্রতিকই , ২০১৯ সালের নভেম্বরে।
যা এখনও আন্দামান সাগরে পুনর্জন্ম হওয়া চতুর্থ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় । প্রতি বছরেই ঘূর্ণিঝড় দানবীয় রুপ নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে আঁচড়ে পড়ছে, ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে লাখো লাখো মানুষের । প্রকৃতির এরুপ আচরনের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মানবজাতিই দায়ী । যার কুফল হিসেবে প্রতিবছর ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে মানবজাতিকেই । মার্কিন যুগ্ম টাইফুন সতর্কতা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মে মাসে সোমবার বঙ্গোপসাগরে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকায় স্থান পায় “সুপার সাইক্লোন আম্ফান” ।
মহাসেন, মোরা, ফণীর মতো ঘূর্নিঝড় অনবরত আঘাত হেনেই চলেছে ইউরোপ এবং এশিয়ার উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে । আবহাওয়া দিনকে দিন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে পৃথিবীর জন্য । তাহলে কি পৃথিবী বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে? আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অনেক বিশেষজ্ঞ।
জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে পরবর্তীতে ভয়ানক কারন হয়ে দেখা দিতে পারে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য । প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রথমেই নজর দিতে হবে গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ বন্ধের দিকে।
নচেৎ, বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের লন্ডভন্ড ও তান্ডবীয় আচরণ, বাড়বে আকস্মিক বৃষ্টিপাত, খরা এবং বন্যা ও হ্রাস পাবে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন । উন্নত রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাকে।
সুপরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে শিল্পখাতকে। শুধু গ্রীষ্মকালীন সময়ে পরিকল্পনা করলে চলবে না, এর বাস্তবায়ন আনা উচিত সারাবছরের কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করেই। মহামারি করোনা ভাইরাসকে বিশ্ব যেরুপে যুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করেছে, একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে যুদ্ধের সমতুল্য বিবেচনায় রেখে সামিল হতে হবে গোটা বিশ্বকে। করোনা-পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাকে আমলে না আনলে ভবিষ্যতে “আম্ফান” এর চেয়েও ধ্বংসাত্নক ও দানবীয় শক্তি নিয়ে আঘাত হানবে পৃথবীর বুকে, মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে উন্নয়নশীল দেশগুলো, আবহাওয়ার ভয়াল রুপ দেখা দিবে গোটা বিশ্বে।
